মুদ্রানীতির ওপর একটি পর্যালোচনা -- ড. মনজুর হোসেন
গত ২৯ জানুয়ারি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরের প্রথমার্ধে ঘোষিত মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা এবারো রক্ষা করা হয়েছে। এবারের মুদ্রানীতি নিয়ে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যত আলোচনা হচ্ছে, তা থেকে এর ওপর বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রত্যাশার বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এবারের মুদ্রানীতি সে প্রত্যাশার কতটুকু পূরণে সমর্থ হয়েছে? বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিকে বিনিয়োগবান্ধব বললেও ব্যবসায়ী মহল একে বিনিয়োগবান্ধব বলছে না। তার অর্থ হচ্ছে, এবারের মুদ্রানীতিকে ব্যবসা বা বিনিয়োগবান্ধব করার প্রচেষ্টা যেমন ছিল, তেমনি প্রত্যাশাও ছিল। তবে প্রত্যাশা ও প্রচেষ্টার সম্মিলন না ঘটাটা কতটুকু যৌক্তিক, তা পর্যালোচনার অবকাশ রাখে। বেশ কয়েক বছর ধরে জিডিপি অনুপাতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ স্থবির থাকার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ মুদ্রানীতিতে নেয়া হবে ধারণা করা হলেও এবারের মুদ্রানীতিতে তার প্রতিফলন হয়নি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যক্তিখাতের ঋণপ্রবাহের ও মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধির যে টার্গেট ধরা হয়েছে, বছরের এ অর্ধের মুদ্রানীতিতেও তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত অর্ধে ব্যক্তিখাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হলেও নভেম্বরে ১৫ দশমিক শূন্য শতাংশ অর্জন হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হলেও তার বিপরীতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত। কিন্তু সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির যে টার্গেট ধরা হয়েছে (১৬.৪%), তা কতটুকু অর্জন হবে— সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। এর বড় কারণ হচ্ছে, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে টার্গেটেরও বেশি ঋণ এরই মধ্যে নিয়েছে এবং সঞ্চয়পত্রের কোনো রূপ সংস্কারের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যদি টার্গেট অনুযায়ী ঋণ না নেয়, তাহলে সামগ্রিক দেশজ ঋণের যে টার্গেট ধরা হয়েছে (১৬.৪%), তা অর্জন হবে না। সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার এ ধরনের অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিখাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির হারের টার্গেট অনায়াসেই মুদ্রাস্ফীতির কোনো রূপ প্রভাব ছাড়াই বাড়ানো যেত।